বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৪:৪১ অপরাহ্ন
আমতলী প্রতিনিধি: ইলিশ প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে ৬ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৮ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ শিকারের জেলেদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। কিন্তু গত মাসে সাগরে প্রচুর মা ইলিশ ধরা পড়ছে। এসব ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য উপকূলের নদ-নদীতে আসতেছিল। আর বর্তমানে যে ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে তা জাটকা। এ কারণে অভিজ্ঞ জেলেদের অভিমত প্রজনন মৌসুম পাল্টে গেছে। কিন্তু সরকারে নিষেধাজ্ঞার সময় পাল্টায়নি।
মা ইলিশ প্রজননের উদ্দেশ্যে স্বাদুপানি ও স্রোতের উজানে অগভীর পানিতে উঠে আসে এবং ডিম ছাড়ে। মুক্ত ভাসমান ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে। অপ্রাপ্তবয়স্ক মাছ (জাটকা) নদীর ভাটিতে নেমে সমুদ্রে পৌঁছে বড় হয়। প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রজননক্ষম হয়ে জীবনচক্র পূর্ণ করার জন্য আবার নদীতে ফিরে আসে। ইলিশ উচ্চ-উৎপাদনশীল। বড় আকারের একটি ইলিশ ২০ লক্ষ পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে। ইলিশ সারা বছর ডিম পাড়লেও সবচেয়ে কম পাড়ে ফেব্রæয়ারী-মার্চে ও সবচেয়ে বেশি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে।
বিষেশজ্ঞদের মতে প্রজনন ঋতু নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্ত্রী মাছের জিএসআই (এড়হধফড় ঝড়সধঃরপ ওহফবী) পরিমাপ পদ্ধতি। জিএসআই হলো মাছের ডিমের ওজন ও দেহের ওজনের অনুপাতের শতকরা হার। সাধারণত প্রজনন ঋতুতে ডিমের আকার বড় হতে থাকে বলে জিএসআই বাড়তে থাকে এবং ভরা প্রজনন মৌসুমে গিয়ে তা সর্বোচ্চ হয়। প্রজনন ঋতুতে পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময়ে বিগত পাঁচ বছরের জিএসআইর পরিমাপ থেকে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ইলিশ সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত প্রজনন করে। সেপ্টেম্বরের শেষ ভাগে জিএসআই ১০-১১ থেকে বাড়তে বাড়তে অক্টোবরের মাঝামাঝি কিংবা শেষের দিকে এসে সর্বোচ্চ ১৫-১৭ পর্যন্ত পৌঁছায় এবং নভেম্বরে এসে তা হঠাৎ করে কমে যায়। ১৫-১৭ জিএসআই ইলিশের ভরা প্রজনন মৌসুম নির্দেশ করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর প্রজনন মৌসুম শুরু হবে অক্টোবরের প্রথম দিকে। এজন্য ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা হওয়া উচিত ছিলো সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে।
সরকারিভাবে চান্দ্র মাসের ভিত্তিতে প্রধান প্রজনন মৌসুম ধরে এ বছর আশ্বিন মাসের প্রথম চাঁদের পূর্ণিমার দিন এবং এর আগে চার ও পরের ১৭ দিনসহ মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। সেই হিসেবে ইলিশের প্রজনন মৌসুম আজ মধ্যরাত থেকে ৬ অক্টোবর মধ্যরাতে শুরু।
অনেক অভিজ্ঞ জেলেদের মতে ইলিশ প্রজনন মৌসুম মুলত শুরু হয়েছে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে অক্টোম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এই সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য উপকুলের নদ-নদীতে আসে। কিন্তু পুরো সেপ্টেম্বর জুড়ে সাগড়ে মা ইলিশ ধরা পরেছে। ওই ইলিশগুলোই ডিম ছাড়ার জন্য স্বাধু পানির নদ-নদীতে প্রবেশ করার উপযুক্ত সময় ছিল সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে। কিন্তু সরকার প্রজনন মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এসে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
পায়রা নদীতে মাছ শিকারী জেলে রহমান গাজী, ছত্তার আকন ও জালাল বলেন, গত ১৫ দিন পূর্বে থেকে নদীতে প্রচুর মা ইলিশ ধরা পরেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে নদীতে জাটকা ইলিশ ধরা পরেছে। বর্তমানে প্রজনন মৌসুম হলেও প্রজননক্ষম তেমন বড় ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পরছে না। তারা আরো বলেন, ধারনা করা হচ্ছে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে প্রজননের উপযুক্ত সময় ছিল।
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সরদার বলেন, ইলিশ সারা বছরই ডিম ছাড়ে। কিন্তু সবচেয়ে বেশী ডিম ছাড়ে আশ্বিনের বড় পুর্ণিমা ও আমবশ্যায়। তাই উপযুক্ত সময়েই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন সরকার।
ইলিশ গবেষক বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট ড. মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, আশ্বিন মাসের বড় পুর্ণিমায় মা ইলিশ সবচেয়ে বেশী ও পরিপক্ক ডিম ছাড়ে। ওই বড় পুর্ণিমার দিন পরেছে ৯ অক্টোবর। আবার একই মাসের আমবশ্যায় বেশী ও পরিপক্ক ডিম ছাড়ে। ওই আমবশ্যার দিন পরেছে ২৪ অক্টোবর। বড় পুর্ণিমা ও আমবশ্যার তারিখ ঠিক রেখে সরকার ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সময় নির্ধারণ করেছে। সেই হিসেবে ২২ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply